নয়নতারা
বাগানের কোণে একটা ছোট নয়নতারা গাছ। কখন যে কি ভাবে গজাল কেউ
জানে না। সাজান বাগানে গাছটা যেন এক আপদ। আজ এদিকে ঝোকে তো কাল ওদিকে। এক টানে তুলে ফেলে দিলাম তাই
একদিন। ভাবলাম আপদ গেল।
একি!! মাস ঘুরতে না ঘুরতেই দেখি
আবার এককোণে উঁকি মারছে সেই সাদা নয়নতারা। উফফ!! কি বিপদ বল দেখি?
বিরক্ত হয়ে
আবার তুলে ফেলতে গেলাম। কিন্তু টান মারতে গিয়েও থমকে গেলাম। এক আজানা মায়া। থাকলই না হয় এক পাশে!
সুন্দর লাগছে
সাদা ফুলগুলো। কেন মিছে আঘাত হানা! থাকই নাহয়,
একটু কেটে
ছেঁটে এককোণে। দিন গেল, মাস গেল, বছর ঘুরে গেল। নিতান্ত অবহেলায় আর অযত্নে
পরে রইল সেই নয়নতারা বাগানের কোণে। গড়িয়ে আসা জলেই তার জীবন,
বেশি ডাল-পালা মিললেই পড়ে কোপ। তাবু সে বেঁচে থাকে নিজের
চেষ্টায়।
সময়ের সাথে বদলে যায় কতকিছুই। বদলে গেল অবহেলাও। বাগানের মরসুমি গাছগুলির
যাওয়া আসার মাঝে, চিরন্তন এই সাদা নয়নতারা। বিরাম নেই তার ফুল ফোটানোর। গোধূলি আলোয় সাদার নির্মলতা
মন কেড়ে নেয়। নিজের গুণেই মনের কোণে কখন যে জায়গা করে নিল বুঝতেই পারলাম না। কখন যে রোজ খেয়াল রাখা শুরু
করলাম নিজেই জানি না। জানি না কখন দিলাম তাকে অবাধে বেড়ে ওঠার স্বাধিনতা।
কেটে গেল সময় নিজের গতিতে। ছোটো সেই নয়নতারা এখন সুন্দর
আর বাহারি। তার শোভায় সেজে ওঠে আঙ্গিনা। যে ছিল নিতান্ত অবহেলার,
তারই পরিচর্যায়
সময় কেটে যায়। তাকে না দেখে মন ভরে না। তাই আর বাগানের কোণে নয়,
আদর করে তুলে
নিলাম তাকে টবে। বাগানের ভিড় থেকে উঠে এল সে সাজানো বসার ঘরে। সকাল বিকেল সারাক্ষণ
পরিচর্যা। একদিন যাকে তুলে ফেলে দিতে চেয়েছিলাম,
আজ সেই হল
নয়নমণি। বাগান হল মিথ্যে। সব স্বপ্ন শুধু এই একটি গাছ ঘিরে। আদর পেয়ে সেজে উঠল নয়নতারাও। আরও সুন্দর আর বড় বড় পাপড়ি
মিলে ভরিয়ে দিল মন। ঘর ভরে গেল অপূর্ব এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যয়ে।
দিন কাটল, মাসও। কিন্তু বছর ঘুরলো না। তার আগেই ধীরে ধীরে কমে গেল বাহার। বড় বড় পাপড়ি হয়ে গেল ছোটো। ভরে থেকে গাছ এখন যেন খালি খালি লাগে। তারপর কমতে শুরু করল কুঁড়ির সংখ্যা। মাস না ঘুরতেই গাছ হয়ে গেল পাতা সর্বস্ব। মন দমে গেল। আরও বেশি যত্ন শুরু হল। কিন্তু সুফল মিলল না কিছুই। যেন সেই উপড়ে ফেলার প্রতিশোধ নিল সে আমার উপর। আজও আমি বসে আছি আশায়। একদিন ফুটবে ফুল। একদিন নয়নতারা বুঝবে আমার ভালবাসা। কিন্তু সত্যি কি বুঝবে সে?
হয়ত একদিন বুঝবে.....
ReplyDelete